২০২১ সালে ‘দেশ বিদেশের ভূত’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর নানান বয়সের বেশ কিছু পাঠক-পাঠিকাদের মধ্যে সেই বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কৌতূহল ছিল লক্ষনীয়। যা পরবর্তীকালে আমাদের আরও ভাবতে বাধ্য করে। বিষয় নির্বাচনে বেশী সময়ও লাগেনি। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে, কোনো একটি বিশেষ দেশের উপকথার ভৌতিক কাহিনীসমূহই হোক আমাদের পরবর্তী বইয়ের বিষয়বস্তু। আর উপকথার ভৌতিক কাহিনী নিয়ে চিন্তা শুরু করলেই প্রথমেই মাথায় আসে ‘জাপান’ নামক অদ্ভুত দেশটির কথা।
‘অদ্ভুত’ শব্দটির ব্যবহার কিন্তু এতো সুন্দর দেশটিকে বিবরণ করার জন্য নয়। জাপানের উপকথার একটি বিশেষ দিককে মনে করলেই এই শব্দটি মাথায় স্থান করে নেয়। আর তা হবে না-ই বা কেন বলুন! জাপানের উপকথা জুড়ে সাধারণ থেকে অতি সাধারণ বিষয়কে কেন্দ্র করেও ছড়িয়ে আছে এক-একটি ভৌতিক উপাখ্যান। তা সে কোনো বিশেষ পাথরই হোক বা প্রাচীন পুঁথি বা স্ক্রোল। জাপানের ইতিহাসের বীরগাথার সঙ্গে এই অলৌকিকতার মিশ্রণে সে দেশের সাহিত্য এবং সংস্কৃতি হয়েছে সমৃদ্ধ।
এই ভৌতিক উপকথা এবং লোকগাথার একটা ছোট নির্যাসকে একত্রিত করে রচিত এই ‘কোডেক্স ইয়োকাই’ বইটি। বইটি পড়তে শুরু করলেই লেখক অভিষেক মিত্র-র অক্লান্ত পরিশ্রম এবং পড়াশোনার কথা প্রতিনিয়ত মনে হবে। ‘কোডেক্স’ শব্দের অর্থ একপ্রকার পুঁথি আর জাপানী ভাষার দুটি শব্দ ‘ইয়ো’ এবং ‘কাই’ জুড়ে গঠিত হয়েছে ‘ইয়োকাই’। এই ‘ইয়োকাই’ শব্দটির উৎপত্তির ইতিহাস সম্পর্কে লেখক বইয়ের শুরুতেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর তারপরে রয়েছে একের পর এক তথ্যনির্ভর ভূত-পিশাচ-আরবান লেজেন্ডদের কাহিনী। মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা কোনো ভৌতিক গল্পের বই নয় এটি। এই বই জাপানের আলৌকিক চরিত্রদের সঙ্গে বাঙালি পাঠকের যোগসূত্র তৈরির একটি প্রয়াস বলা যেতে পারে।