দরিদ্র, ধনী, জাতিধর্মনির্বিশেষে এই গম্ভীরা উৎসবে অংশ নিতে দেখা যায়। গ্রামে-গঞ্জে এই উৎসবকে ঘিরে সকলেই আনন্দ-মুখর হয়ে ওঠে। গবেষক পণ্ডিতদের মধ্যে অনুমান করতে দেখা যায়, মালদহ এবং এই বরেন্দ্রভূমি এলাকায় প্রচলিত গাজন উৎসব 'গম্ভীরা' নামে খ্যাতি লাভ করেছে। যেহেতু গৃহে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় সেজন্যই গম্ভীরা উৎসব। অবিভক্ত মালদহ যে সকল এলাকায় গম্ভীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে মহদীপুর, ভালুকা, চাঁচল, কলিগ্রাম, বাহুতাড়া, নবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, সাহাপুর। এ ছাড়া ইংরেজবাজারের জামতলী গম্ভীরা, ঘোড়াপাড়ার গম্ভীরা, মকদুমপুরের গম্ভীরা, হাটখোলা ঘোষপাড়ার গম্ভীরা, পাকুয়াহাট, বারঘরিয়া, খাসকোল, মহদীপুর, নিয়ামতপুর, বৈদ্যনাথপুর, গয়েশপুর, গোঁসাইপুর প্রভৃতি। মালদহে যত গম্ভীরা আছে, তার মধ্যে প্রাচীনতম গম্ভীরার নাম "ছত্রিশী গম্ভীরা'। আইহো গ্রামের সতেরোটি গম্ভীরা পুজোর মধ্যে একটির নাম 'ছত্রিশী গম্ভীরা', এ ছাড়া 'বাইশী'ও। বর্তমানে এই পুজোয় একদিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত পুজো ও উৎসবের প্রচলন আছে। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন গম্ভীরা পুজো ও উৎসব শুরু হয়ে থাকে। কোনো কোনো অঞ্চলে চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ এমন কি শ্রাবণ-ভাদ্র মাসেও এই পুজো করতে দেখা যায়। এই গান মালদহের কথ্য ভাষা মূলত বরিন্দ এলাকার ভাষা এবং রাজবংশীদের ভাষা প্রভাবান্বিত। 'করেছে, এই ভাষায় করাছে; 'বুড়া', হবে বুল, 'পা', হবে পাঁও প্রভৃতি। বহুভাষার মিশ্রণে কথ্য ভাষা মিশ্র ভাষায় পরিণত হয়েছে। যেমন খোট্টা ভাষা এসেছে, তেমনি রাজবংশী পালিয়াদের ভাষার প্রভাব আছে এই গানে, তেমনি মৈাথলী, হিন্দি ভাষারও মিশ্রণ ঘটেছে। প্রখ্যাত গম্ভীরা রচয়িতা হল সতীশচন্দ্র গুপ্ত ওরফে সতীশ কবিরাজ, তেমনি তিনি শিল্পীও ছিলেন। এ ছাড়া যোগেন্দ্রনাথ চৌধুরী ওরফে মটর দোকড়ি চৌধুরী, নির্মল দাস ওরফে নিরু, ডাঃ দেবপ্রসাদ কাটিয়ার, কুতুবুল আলম, রকিবুদ্দীন, মাহবুবুল আলম প্রভৃতি। গত্নীরা রচয়িতা ইন্দ্রদমন শেঠ, সতীশচন্দ্র গুপ্ত, সৈয়দ মোহাম্মদ সোলেমান, বিশ্বনাথ পণ্ডিত, বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সিরাজুল ইসলাম, হরিমোহন কৃষ্ণ, শরৎচন্দ্র দাস, বনবিহারী গোস্বামী প্রভৃতি।

শতবর্ষ প্রাচীন এই গ্রন্থটি পুনরায় লোকগান প্রেমিকদের সম্মুখে নিয়ে আসার যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন কবি ও লেখক রণজিৎ দেব ।