আমাদের আত্মা বা আস্তর সত্তার সবচেয়ে বড় প্রার্থনা হল পরমাত্মার সঙ্গে একটি ঐক্যসূত্রে মিলিত হওয়া, আনন্দের মধ্য দিয়ে তাঁর কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করি এবং প্রেমে তাঁকে গ্রহণ করি। ধর্ম তাঁর কাছে নিজের এইরকম অভিজ্ঞতা ও ঔপনিষদিক উপলব্ধিরই ফল। তাঁর ধর্ম মানুষের ধর্ম। বস্তুতপক্ষে এই সূত্রগুলি ধরেই মোরিস রবীন্দ্রনাথের সাধনাময় ব্যক্তিত্বের যে রেখাচিত্র তুলে ধরেছেন, তার মধ্যে প্রাচী-প্রতীচীর ভাবনার মধুরতম মেলবন্ধনটি একবেণীধরা হয়ে উঠেছে।

প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব মোরিৎস ভিনটারনিৎস এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রথম চাক্ষুষ পরিচয় হয় ১৯২১ সালে প্রাগ-এ৷ সেখানেই কবি তাঁকে বিশ্বভারতীর অতিথি অধ্যাপক হিসাবে আমন্ত্রণ জানান। ১৯২২-২৩-এ নবপ্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী-তে প্রায় এক বছরকাল পড়িয়ে এবং রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে এসে মোরিৎস যে অভিজ্ঞতা লাভ করেন তারই ফসল রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাঁর জার্মান ভাষায় লেখা কিছু প্রবন্ধ ও একটি পুস্তিকা৷ সেইগুলিকে অনুবাদ এবং সম্পাদনা ক'রে এই সংকলন রবীন্দ্রনাথের জীবনকে একটি মিতভাষ পরিচয়ে মর্মগ্রাহী ক'রে তুলেছে। ভিনটারনিৎস দেখিয়েছেন যে রবীন্দ্রনাথের মতে আমাদের যথার্থ সত্তার অধিষ্ঠান মূলগতভাবে ঈশ্বর এবং বিশ্বসমগ্রে। ঈশ্বর এবং আত্মা ও বিশ্বজগৎ নিজেদের গভীর মর্মমূলে এক অখণ্ড ঐক্যের মধ্যে বিরাজমান। আমাদের আত্মা বা আন্তর সত্তার সবচেয়ে বড় প্রার্থনা হল পরমাত্মার সঙ্গে একটি ঐক্যসূত্রে মিলিত হওয়া, আনন্দের মধ্য দিয়ে তাঁর কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করি এবং প্রেমে তাঁকে গ্রহণ করি। ধর্ম তাঁর কাছে। নিজের এইরকম অভিজ্ঞতা ও ঔপনিষদিক উপলব্ধিরই ফল। তাঁর ধর্ম মানুষের ধর্ম। বস্তুতপক্ষে এই সূত্রগুলি ধরেই মোরিৎস রবীন্দ্রনাথের সাধনাময় ব্যক্তিত্বের যে রেখাচিত্র তুলে ধরেছেন, তার মধ্যে প্রাচী-প্রতীচীর ভাবনার মধুরতম মেলবন্ধনটি একবেণীধরা হয়ে উঠেছে।