হিমাদ্রি এক বাস্তব চরিত্র। জন্মের বছর পাঁচেক বয়স থেকেই মাতৃহারা বালকটি নিয়তি-তাড়িত। আরেক ভাবে বললে, আজীবন পরিস্থিতির শিকার।

ব্যাপারটা অভিনব কিছু নয়। বিখ্যাতদের নিয়ে জীবনী লেখা হয় যেমন দেশে-বিদেশে। আবার, পাঁচজন আপাত সাধারণের মধ্যে 'ঢোঁড়াই'-এর মতো যে পঞ্চম, তাকে নিয়েও তো শাশ্বত কাহিনি লেখা হয়— যাকে নিখাদ কল্পকাহিনি না বলে বাস্তবাহিত আখ্যান বলাই শ্রেয়। হিমাদ্রি আখ্যানও সেরকমই। রবীন্দ্রনাথের 'ছেলেটা'র মতন পরিবার বৃত্তের বাইরে স্রেফ জেন আর জীবনশক্তির জোরে, বৃষ্টির জলে জনকনিয়ে ওঠা লাউডগার সজীবতায় হিমাদ্রি বেড়ে ওঠে। বছর পনেরো বয়সে ভোররাতে জ্যাঠামশায়ের লঙ্গরখানা থেকে পালিয়ে গান্ধীজির 'ডান্ডি-মার্চ'-এর সংহতিতে ভাটপাড়া থেকে মহিষবাথান কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেয়। সেদিন থেকেই হিমাদ্রি চরিত্রের ভরকেন্দ্র 'নিশ্চিতভাবে' প্রোমিত হয় পরিবার বৃত্তের বাইরে মানুষের মধ্যে। প্রেম, বেকারত্ব ও আত্মসঘটে দিশেহারা বারমুখো নামাল এই যুবকটি কার্যকারণ সম্পর্কের বিবিধ বিন্যাস ও সংমিশ্রণের এক মরিয়া জীবনপর্যায়ে নিজেকে পায় যুদ্ধক্ষেত্রে ঐতিহাসিক মে মরুমুগাল আখ্যায়িত জার্মান জেনারেল রোমেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। তারপর একে-একে লিবিয়া ডিউনিশিয়া সাইপ্রাস ইতালি শেষে দেশে নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে... দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রাম- সাক্ষ্য দেশভাগের পটভূমিকার লেখা এক সাধারণ মানুষের অসাধারণ কাহিনী।